এক নজরে চীনাবাদাম চাষ
উন্নত জাতঃ বিনা চীনাবাদাম-১, বিনা চীনাবাদাম-২, বিনা চীনাবাদাম-৩, বিনা চীনাবাদাম-৪, বিনা চীনাবাদাম-৫, বিনা চীনাবাদাম-৬, বারি চীনাবাদাম-৫, বারি চীনাবাদাম-৬, বারি চীনাবাদাম-৭, বারি চীনাবাদাম-৮, বারি চীনাবাদাম-৯, বারি চীনাবাদাম-১০, ঢাকা-১, ডিজি-২, ডিএম-১, এসিসি-১২ ইত্যাদি উচ্চফলনশীল জাত সারাবছর চাষ করা যায় তবে রবি মৌসুমেই সাধারনত চাষ করা হয় এবং ভালো ফলন হয়।
পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী চীনাবাদামে খাদ্যশক্তি- ০.৫৬৭ কিলোক্যালোরি, আমিষ- ২৫.৮ গ্রাম, শর্করা- ১৬.১৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ৯ মিলিগ্রাম, লৌহ- ২৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম- ১৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম- ৭০৫ মিলিগ্রাম রয়েছে। চীনাবাদামে ক্যারোটিন ও ভিটামিন ই বিদ্যমান।
বপনের সময়ঃ রবিঃ ১৫ কার্তিক হতে ১৫ অগ্রহায়ণ (নভেম্বরের ১ম থেকে শেষ পর্যন্ত), খরিফ-১ঃ ১৫ মাঘ হতে ১৫ ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারীর ১ম থেকে শেষ পর্যন্ত), খরিফ-২ঃ ১লা ভাদ্র হতে ১৫ ভাদ্র (আগষ্টের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত)
চাষপদ্ধতিঃ চীনাবাদাম চাষের জন্য জমিতে তিন থেকে চারটি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। ক্ষেতের চারপাশে নালার ব্যবস্থা করলে পরে সেচ ও পানি নিকাশের সুবিধা হয়। বীজ সারিতে বুনলে সারির সূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং প্রতি সারিতে গাছের দূরত্ব ৬ ইঞ্চি রাখতে হবে। ত্রিদানা বাদাম (ডিএম-১) জাতের ক্ষেত্রে সারির দূরত্ব ১০ ইঞ্চি এবং সারিতে গাছের দূরত্ব ৪ ইঞ্চি রাখা প্রয়োজন। বীজ ১-১.৫ ইঞ্চি মাটির নিচে বপন করতে হবে।
বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ৪৮০ থেকে ৫০০ গ্রাম।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম |
শতক প্রতি সার |
হেক্টর প্রতি সার |
ইউরিয়া |
৮০০ গ্রাম - ১.২ কেজি |
২০-৩০ কেজি |
টিএসপি |
৬০০ গ্রাম |
১৫০-১৭০ কেজি |
এমওপি |
৩০০-৩৫০ গ্রাম |
৮০-৯০ কেজি |
জিপসাম |
৬৫০-৭০০ গ্রাম |
১৬০-১৮০ কেজি |
দস্তা |
২০০ গ্রাম |
৪-৫ কেজি |
বরিক এসিড |
৪০০ গ্রাম |
৯-১১ কেজি |
অর্ধেক ইউরিয়া ও সমুদয় টিএসপি ও পটাশ সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাকী অর্ধেক ইউরিয়া সার বপনের ৪০-৪৫ দিন পর গাছে ফুল আসার সময় প্রয়োগ করতে হবে। তবে প্রতি কেজি বীজে ৭০ গ্রাম অণুজীব সার (শতক প্রতি) ব্যবহার করা যেতে পারে। অণুজীব সার ব্যবহার করলে সাধরণত ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয় না।
পোকামাকড়ঃ
•চীনাবাদামের শোষকপোকা/হেপার/শ্যামাপোকা, জাবপোকা এবং সাদামাছি দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) অথবা কারবারাইল জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ সেভিন ২০ গ্রাম) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ পাতার নিচের দিকে যেখানে পোকা থাকে সেখানে স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
•চীনাবাদামের উঁইপোকা দমনে ক্লোরপাইরিফস গ্রুপের কীটনাশক যেমনঃ ডার্সবান ৫ মিলি./ লি হারে পানিতে মিশিয়ে কান্ডে ও গোড়ার মাটিতে স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রোগবালাইঃ
•বাদামের লিফ স্পট / টিক্কা রোগ রোগদমনে কার্বান্ডিজম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ এমকোজিম ৫০ অথবা গোল্ডাজিম ৫০০ ইসি ১০ মিলি /২ মুখ) ১০ লি. পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ৩ বার গাছের গোড়ায় ও মাটিতে স্প্রে করুন। আক্রমণ বেশি হলে প্রথম থেকে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
•বাদামের মরিচা রোগদমনে প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ টিল্ট ৫ মিলি/ ১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
•মোজাইক রোগ ও পাতা কোকড়ানো রোগদমনে জমিতে জাব পোকা দেখা গেলে (বাহক পোকা) ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক (যেমনঃ এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। সকাল বেলা গাছে ছাই ছিটিয়ে দিলে এই পোকা গাছ থেকে পড়ে যাবে৷ ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপদ পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে ৭ থেকে ১৫দিন পর বাজারজাত করুন।
আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার। ফসল বোনার ২৫-৩০দিনের মধ্যে আগাছা বাছাই করতে হবে। সেচ দেয়ার আগে আগাছা বাছাই করতে হবে।
সেচঃ রবি মৌসুমে উঁচু জমিতে মাটির রস তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় বিধায় মাটির রস বুঝে ১-২টি সেচ দিতে হবে। খরিফ মৌসুমে ফসলের অবস্থা বুঝে প্রয়োজনে ১টি সেচ দেয়া যেতে পারে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি দ্রুত বেড় করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ৮-১২ কেজি।
সংরক্ষনঃ চীনাবাদাম গাছের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ বাদাম যখন সম্পূর্ণ পরিপক্ক হয় তখন বাদামের খোসার শিরা উপশিরা গুলো স্পষ্টভাবে দেখা দেয় এবং গাছের পাতাগুলো হলুদ রং ধারণ করে নিচের পাতা ঝরে পড়ে তখন ফসল তোলার উপযুক্ত সময়। বাদামের খোসা ভাঙ্গার পর খোসার ভিতরে কালচে দাগ এবং বীজের উপরের পাতলা আবরণ বা খোসা বাদামী বা লালচে বা বেগুনী রং (জাত ভেদে) ধারণ করলেই ফসল কাটার উপযুক্ত সময়। ফসল কাটার পর গাছ থেকে খোসাসহ ছাড়ানো বাদাম উজ্জ্বল রোদে দৈনিক ৭-৮ঘণ্টা করে ৫-৬দিন রোদে শুকাতে হবে।