এক নজরে সূর্যমুখী চাষ

পুষ্টিগুন: সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% লিনোলিক এসিড রয়েছে, তাছাড়া এ তেলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হৃদরোগীদের জন্য সূর্যমুখীর তেল খুবই উপকারী।

উন্নত জাত: ডি এস-১ ও বারি সূর্যমূখী-২ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত।

বপনের সময়: ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য আগষ্ট-মধ্য অক্টাবর)।

চাষপদ্ধতি: জমির প্রকারভেদে জমিতে ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে ও আগাছামুক্ত করে বীজ বপন করতে হবে। বীজ লাইনে বপন করা উত্তম লাইন থেকে লাইন দূরত্ব ২০ ইঞ্চি এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১০ ইঞ্চি রাখতে হয়।

বীজের পরিমান: জাত ভেদে বীজের পরিমান শতক প্রতি ৩৫-৪০ গ্রাম।

সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি শতকে গোবর ৪.৪৫-৫.২৬ কেজি, ইউরিয়া ৭৩০-৮১০ গ্রাম, টিএসপি ৬১০-৮১০ গ্রাম, এমওপি ৪৯০-৬১০ গ্রাম, জিপসাম ৪৯০-৬৯০ গ্রাম, দস্তা ৩০-৪০ গ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৩২০-৪০০ গ্রাম, বোরণ সার ৪০-৫০ গ্রাম। অর্ধেক ইউরিয়া সমুদয় অন্যান্য সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট অর্ধেক ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে প্রথমভাগ চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় ভাগ ৪০-৪৫ দিন পর ফুল ফোটার পর্বে প্রয়োগ করতে হবে।

পোকামাকড়:

  • সূর্যমুখীর বিছাপোকা দমনে এমামেক্টীন বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক (যেমন প্রোক্লেইম ১০ গ্রাম) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড অথবা সিমবুশ ২০ মিলিলিটার/৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • সূর্যমুখীর পাতা ও মাথা ছিদ্রকারি পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোথায়ারানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশক (যেমন ভলিউম ফ্লেক্সি ৫ মিলিলিটার অথবা ১মুখ) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০ লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • সূর্যমুখীর থ্রিপসপোকা/শোষকপোকা/হেপার/শ্যামাপোকা, জাবপোকা এবং সাদামাছি দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২মুখ) অথবা কারবারাইল জাতীয় কীটনাশক (যেমন সেভিন ২০ গ্রাম) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ পাতার নিচের দিকে যেখানে পোকা থাকে সেখানে স্প্রে করতে হবে।
  • সূর্যমুখীর কাটুই পোকা দমনে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক (কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০ এসপি ২০ মিলি/৪ মূখ) অথবা ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (ক্যারাটে ২.৫ ইসি অথবা ফাইটার প্লাস ২.৫ ইসি ১৫ মিলি/৩ মূখ) ১০ লিটার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।  

রোগবালাই:

  • পাতা ঝলসানো রোগ দমনে প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ মিলি/১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ডাঊনি মিলডিউ রোগ দমনে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ রিডোমিল গোল্ড ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম) মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে যেতে পারে। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবেঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • সূর্যমুখীর সূর্যমুখীর হোয়াইটমোল্ড রোগ দমনে প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ মিলি/১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সতর্কতা: বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।

আগাছা: ফসল বোনার/ রোপনের ৩০-৩৫ দিনে নিড়নি দিন। আগাছার পরিমাণ বেশি হলে এর ১০-১৫ দিন পর  আরেকবার নিড়ানি দিয়ে ধাবক ও মুলকন্দ সরিয়ে ফেলুন ।

সেচ: চারা গজানোর ২৫-৩০ দিন পর অবস্থা ভেদে ১ম সেচ দিন এবং ৪০-৪৫ দিন পর বা ফুল ফোটর আগে ২য় সেচ দিন। বীজ পুষ্ট হবার আগে প্রয়োজনে ৩য় সেচ দিন। গর্ত খুড়ে বীজ বোনা হলে ১ম সেচ অবশ্যই দিবেন। কারণ এর সাথে সার প্রয়োগ ও গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া জড়িত।

আবহাওয়া ও দুর্যোগ: তাড়াতাড়ি অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করার ব্যবস্থা করুন। হেলে পড়া গাছ সোজা করে নিন।

ফলন: জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ৬-৭.৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

সংরক্ষন: ফলের পাকা অবস্থায় গাছের পাতা হলদে হয়ে আসে মাথা নুয়ে পড়ে। হেডের দানা গুলো পুষ্ট, শক্ত ও কালো রং ধারন এবং হেডের গোড়া বাদামী হয়ে আসলে হেড সংগ্রহ করুন। মাথাগুলো রোদে শুকিয়ে নিন। নরম হলে মাথার পেছন দিকে শক্ত লাঠি বা কাঠি দিয়ে আস্তে আস্তে আঘাত করে মাথা থেকে বীজ আলাদা করে নিন। অথবা, দু হাতে ভালভাবে রোদে শুকানো দুটি হেড নিয়ে পরষ্পর ঘসে বীজ ছড়িয়ে নিন। বীজে যেন বৃষ্টি বা পানি ও ময়লা কিছু না লাগে তা খেয়াল রাখুন।