এক নজরে মুখী কচু চাষ
উন্নত জাতঃ বারি মুখীকচু-১, বারি মুখীকচু-২ ইত্যাদি উচ্চফলনশীল জাত খরিফে চাষ করা যায়।
পুষ্টিগুনঃ মুখী কচুতে প্রতি ১০০ গ্রামে ২৬৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি রয়েছে। তাছাড়া নানাবিধ পুষ্টিগুন যেমন খনিজ পদার্থ, আমিষ, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২ ও শর্করা ইত্যাদি রয়েছে ।
বপনের সময়ঃ মধ্য মাঘ -মধ্য ফাল্গুন ( ফেব্রুয়ারী)
চাষপদ্ধতি: মুখীকচুর জন্য মাটি গভীরভাবে ৪ টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়।
একক সারি পদ্ধতিঃ উর্বর মাটির জন্য লাইন থেকে লাইন দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি । অনুর্বর মাটির বেলায়লাইন থেকে লাইন দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১ ফুট ৪ ইঞ্চি রাখতে হয়।
ডাবল সারি পদ্ধতিঃ এ পদ্ধতিতে লাইন থেকে লাইন দূরত্ব ৩০ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি বেশি উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আড়াই ফুট দূরে দূরে লম্বালম্বি দাগ টানতে হয়। এই দাগের উভয় পাশে ৪ ইঞ্চি দূর দিয়ে ২৪ ইঞ্চি পর পর বীজ লাগিয়ে যেতে হয়। এতে দুই লাইনের মধ্যে দূরত্ব ২২ ইঞ্চি এবং এক সারির দুই লাইনের মধ্যে দুরত্ব হয় ৮ ইঞ্চি। এই পদ্ধতিতে বীজ লাগালে ফলন প্রায় ৪০-৫০% বেড়ে যায়। দুই সারির ৩ টি বীজ সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ উৎপন্ন করবে।
বীজের পরিমানঃ শতক প্রতি ২ কেজি, ১৫-২০ গ্রাম ওজনের ৫৮-৬০ টি।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম |
শতকপ্রতিসার |
কম্পোস্ট |
৫০-৬০ কেজি |
ইউরিয়া |
১.২০-১.৪০ কেজি |
টিএসপি |
০.৬১-০.৮১ কেজি |
পটাশ |
১.২০-১.৪০ কেজি |
জিপসাম |
০.৪-০.৫৩ কেজি |
দস্তা |
০.০৪-০.০৬ কেজি |
বোরন |
০.০৪-.০৫ কেজি |
সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, দস্তা ও বোরণ সার এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক পটাশ সার জমি তৈরির আগে শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও পটাশ সার চারা রোপণের ৩৫-৪০ দিন এবং ৬৫-৭৫ দিন এর মধ্যে পার্শ্বে প্রয়োগের মাধ্যমে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
সেচঃ মুখী কচু খরা মৌসুমে লাগানো হলে বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য তো বটেই প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে মাটির প্রকারভেদে ১০-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে সেচ দেয়ার দরকার পড়ে না তবে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে হবে। মনে রাখতে হবে মুখী কচুর উচ্চ ফলনের জন্য প্রয়োজনীয় সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা যথাসময়ে গ্রহণ করতে হবে।
আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে । প্রতিবার উপরি সার প্রয়োগের আগে অবশ্যই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। চারা লাগানোর দুই মাস পর হতে প্রতি মাসে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি দ্রুত বেড় করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পোকামাকড়ঃ
রোগবালাইঃ
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।
ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ১২০-১৪০ কেজি।
সংরক্ষনঃ মুখি কচু ৬-৯ মাসের ফসল। কন্দ রোপনের ৬ মাস পর সেপ্টেম্বর (মধ্য ভাদ্র) মাসে আগাম ফসল তোলার উপযোগী। এরপর গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ ও গাছ ধীরে ধীরে মারা গেলে মুখি কচু তুলতে হয়। কোদাল দিয়ে মাটি খুড়েঁ মুখী সংগ্রহ করা হয়। স্বল্প পরিসরেঃ ভালোভাবে সতর্কতার সাথে গুড়ি তুলতে হবে। কাটা, পচা, ক্ষতযুক্ত, ছোট-মাঝারি-বড় আকার দেখে আলাদা করে রাখতে হবে। ঠান্ডা ও ছায়াময় এবং বাতাস চলাচলের সুবিধাযুক্ত স্হানে স্তুপ করে বা মেঝেতে ছড়িয়ে মুখীকচু শুকানো যায়। ছায়ায় শুকানোর পর নাড়াচড়া করলে গুড়ির গায়ের মাটিসহ অন্যান্য ময়লা পড়ে গিয়ে গুড়ি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এরপর ঘরের ছায়াযুক্ত স্হানে মাচা বা কাঠের উপর রেখে শুকনো ঠান্ডা পরিষ্কার বালি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এভাবে মুখীকচু ৪/৬ মাস পর্যন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।