এক নজরে ছোলা চাষ

উন্নত জাতঃ বারি ছোলা-২, বারি ছোলা-৩, বারি ছোলা-৪, বারি ছোলা-৫, বারি ছোলা-৬, বারি ছোলা-৭, বারি ছোলা-৮, বারি ছোলা-৯বিনাছোলা-১, বিনাছোলা-২, বিনাছোলা-৩, বিনাছোলা-৪, বিনাছোলা-৫, বিনাছোলা-৬, বিনাছোলা-৭, বিনাছোলা-৮, হাইপ্রোছোলা এবং বিএসএমআরইউ ছোলা-১জাত সমূহ রবি মৌসুমের জন্য উপোযোগি

পুষ্টিমান :

ছোলায় আমিষের পরিমাণ অনেক বেশি, জাত ভেদে প্রায় শতকরা ২০-২৫ ভাগ। এর পুষ্টিগুন নানাবিধ। প্রতি ১০০ গ্রাম ডালে আছে খনিজ পদার্থ-২.৭ গ্রাম, আঁশ-১.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩৭২ কলিক্যালোরি, আমিষ-২০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম-৫৬ মিলিগ্রাম, লৌহ-৯.৮ মিলিগ্রাম। এছাড়া সামান্য পরিমাণ ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২ ও শর্করা থাকে।

বপনের সময়ঃ ৫-২৫ অগ্রাহায়ন অথবা ২০ নভেম্ভর থেকে ১০ ডিসেম্ভর

চাষপদ্ধতি: জমিতে সরাসরি বীজ বুনতে হয়। গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝঝরে করে ১০-১৫ দিন পর  ছিটিয়ে না বুনে ৪০ সেমি দুরত্বে লাইন টেনে  ৫-৬ সেমি দূরে দূরে ২-৩ সেমি গভীরতায় বুনে মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। বীজ গজানোর পর প্রতি বর্গ মিটারে ৫০-৬০টি চারা রাখুন। রসের অভাব হলে ঝাঁঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিন। বীজের সম্ভাব্য পরিমান জাতভেদে শতক প্রতি ১৬০-২০ গ্রাম

বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে প্রতি শতকে ১৮০-২০০ গ্রাম।

সারব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

শতক প্রতি সার

হেক্টর প্রতি সার

গোবর/ জৈব সার

৩৫ কেজি

৫-৮ টন

ইউরিয়া

১৪০.০০ গ্রাম

৪০-৫০ কেজি

টিএসপি

৩০০.০০ গ্রাম

৮০-৯০ কেজি

এমওপি

১৫০.০০ গ্রাম

৫০-৬০ কেজি

জিপসাম

৮০.০০ গ্রাম

৬-৭ কেজি

বোরিক এসিড

৫০.০০ গ্রাম

৫-৬ কেজি

 

 হেক্টর প্রতি জৈব সার: ৫-৮টন। ইউরিয়া: ৪০-৬০ কেজি। টিএসপি: ৮০-৯০কেজি। এমওপি:  ৫০-৬০ কেজি।  জিংক সালফেট: ৬-৭ কেজি। বোরন সার ৫-৬ কেজি। রাসায়নিক সার জমি তৈরির শেষ সময়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। প্রতি কেজি বীজে ৯০ গ্রাম অনুজীব সার ব্যবহার করলে ইউরিয়ার প্রয়োজন নাই। প্রতি শতকে ৩৫ কেজি পচা গোবোর অথবা কম্পোস্ট সার, ইউরিয়া ১৪০ গ্রাম , ডিএপি ৩৫০ গ্রাম এবং এমপি ১৮০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৯০ গ্রাম হারে অনুমোদিত অণুজীব সার প্রয়োগ করতে হবে

পোকামাকড়ঃ

  • ফলছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোথায়ারানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশক (যেমন ভলিউম ফ্লেক্সি মিলিলিটার  অথবা ১মুখ ) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার  অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর / বার
  • বিছাপোকা দমনে আক্রমণ বেশি হলে এমামেক্টীন বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক ( যেমন প্রোক্লেইম ১০ গ্রাম) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড ১০ তরল অথবা  সিমবুশ ১০ তরল  ২০ মিলিলিটার / মুখপ্রতি ১০ লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর বার স্প্রে করতে হবে
  • সাদা মাছি দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো -১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর / বার
  • জাবপোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো -১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর / বার
  • লেদাপোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন- ম্যাজিক অথবা কট অথবা সিমবুশ যেকোনো একটি ১০ মিলিলিটার/২ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার

রোগবালাইঃ

  • পাতায় দাগ এবং গোড়া পচা রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে গাছের গোড়ায় মাটি ভিজিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে
  • ছোলার পাতায় হলদে মোজাইক রোগের বাহক পোকা (জাবপোকা) দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার
  • ঢলে পড়া / নুয়ে পড়া রোগ দমনে রোগের আক্রমণ বেশি হলে টেবুকোনাজল+ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন ৫গ্রাম নাটিভো ) অথবা প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ৫ মিলিলিটার /১মুখ)  ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

সতর্কতাঃ  বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না

আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবেফসল বোনার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে নিড়নি দিয়ে আগাছা বাছাই করতে হবে। সেচ দেয়ার আগে আগাছা বাছাই করতে হবে।

সেচঃ বীজ বপনের আগে খরা হলে সেচ দিয়ে জমিতে জো আসার পর বীজ বপন করতে হবে জমি একেবারেই শুকিয়ে গেলে হালকা সেচ দিয়ে নিড়ানি দিন জমিতে গোড়া পচা অথবা অন্যান্য ছত্রাকের আক্রমন হলে কোনভাবেই সেচ দেয়া যাবে না, এমন অবস্থায় সেচ দিলে ছত্রাক দ্রুত পুরো জমিতে ছড়িয়ে পরতে পারে।

আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ৬-৮ কেজি

সংরক্ষনঃ ভালোভাবে শুকিয়ে, বীজ বস্তা, ড্রাম অথবা পলিথিনে ভরে শুকনা এবং ঠাণ্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন। শুসরী পোকাসহ আন্যান্য গুদামজাত পোকা দমনে প্রতি ১০০ কেজি বীজের বস্তার মধ্যে একটি ফসটক্সিন ট্যাবলেট দিয়ে বস্তার মুখ বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। বীজের পরিমান কম হলে নিমের তেল অথবা নিম পাতার শুকনো গুড়া ব্যবহার করতে পারেন।