এক নজরে শিম চাষ

উন্নত জাতঃ বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৩(গ্রীষ্মকালীন), বারি শিম-৪, বারি শিম-৫, বারি শিম-৬, বারি শিম-৭(গ্রীষ্মকালীন), বারি শিম-৮ ইত্যাদি চাষ করা হয়।

পুষ্টিমানঃ প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী শিমে জলীয় অংশ- ৮৬.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ- ০.৯ গ্রাম, আঁশ- ১.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি- ৪৮ কিলোক্যালোরি, আমিষ- ৩.৮ গ্রাম, চর্বি- ০.৭ গ্রাম, শর্করা- ৬.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২১০ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন- ১৮৭ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১- ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২- ০.০৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি- ৯ মিলিগ্রাম রয়েছে।

বপনের সময়ঃ গ্রীষ্মকালে চৈত্র (মার্চ) এবং শীতকালে আষাঢ় থেকে ভাদ্র আগাম লাগালে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে বোনা উত্তম। ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর।

চাষপদ্ধতিঃ বীজ বপনের আগে ১০-১২ ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে নিতে নিন। প্রতিটি মাদায় ২-৩ টি করে সুস্থ চারা রেখে বাকী চারা তুলে ফেলতে হয়। গাছ ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মাদায় গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করুন। ডিকয়েলিংঃ চারার বয়স ৪০-৪৫ হলে শিমের ডগা পরস্পর প্যাঁচ লেগে যায়। এতে ডগার বৃ্দ্ধি এবং ফুল-ফল ধারণ ব্যাহত হয়। এজন্য প্যাঁচ ছাড়িয়ে দিন।

বীজের পরিমাণঃ জাত ভেদে প্রতি শতকে ২৮-৩০ গ্রাম।

সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

শতক প্রতি সার

হেক্টর প্রতি সার

গোবর/ জৈব সার

১.৫ কেজি

১০ টন

ইউরিয়া

১০০.০০ গ্রাম

২৫ কেজি

টিএসপি

৩৬০.০০ গ্রাম

৯০ কেজি

এমওপি

২৪০.০০ গ্রাম

৬০ কেজি

জিপসাম

২০.০০ গ্রাম

৫ কেজি

বোরিক এসিড

২০.০০ গ্রাম

৫ কেজি

 

শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর সার এবং জিপসাম সবটুকু ছিটিয়ে জমিতে প্রয়োগ করে চাষ দিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপন বা চারা রোপণের ৪-৫ দিন আগেই ইউরিয়া ও পটাশ সারের অর্ধেক এবং টিএসপি সারের সবটুকু একত্রে ছিটিয়ে প্রয়োগ করে মাদার মাটির সাথে (৪ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত) কোদালের দ্বারা হালকাভবে কুপিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বপন/রোপণের ৩০ দিন পর বাকি অর্ধেক ইউরিয়া এবং পটাশ সার মাদায় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। শিমের জমিতে সার উপরি প্রয়োগের কাজ দুই কিস্তিতে করতে হয়। প্রথম কিস্তি চারাগজানোর এক মাস পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি গাছে দুই-চারটি ফুল ধরার সময়। প্রতি কিস্তিতে মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম ইউরিয়া (শতক প্রতি) ও ২৫ গ্রাম (শতক প্রতি) এমওপি সার গাছের গোড়ার চারদিকে (গোড়া থেকে ৪-৫ ইঞ্চি দূরে) উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সারপ্রয়োগের সময় মাটিতে রসের অভাব হলে ঝাঁঝরি দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে।

সেচঃ বেডের দুপাশে নালার মাধ্যমে সেচ দিন। ফসলের পুরো জীবন কালে মাটিতে রসের মাত্রা ৬০% এর নিচে নেমে যাবার আগে সেচ দিন। রসের মাত্রা অর্ধেকের বেশি এর নিচে গেলে বাড়ন ও ফলন বেশ কমে যাবে। ৯০-১০০ সেমি গভীরতার ৩ ভাগের ২ ভাগ নিচের মাটি হাতের  মুঠোয় নিয়ে চাপ দিলে –

  • চিক বুনটের মাটি / পলিময় কাদা জমিতে তা শক্ত ও কিছুটা আঠালো দলা হলে এবং জমিনে ফেলে দিলে না ভাঙলে ২ দিন পর সেচ দিন।
  • মাঝারি থেকে মোটা বুনটের মাটি / বেলে প্রধান জমিতে  তা শক্ত ও কিছুটা আঠালো দলা হলে এবং জমিনে ফেলে দিলে না ভাঙলে  ১ দিন পরই সেচ দিন।          

আগাছাঃ জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন। সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা  দমন করতে হবে। সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র নিড়ানি দিয়ে আগাছা দমন করতে হবে।     

আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতিবৃষ্টি ও জলাদ্ধতা সমস্যা সমাধানে নালা তৈরি করে রাখুন যাতে অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনে সুবিধা হয়                

পোকামাকড়ঃ

  • শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ কট বা ম্যাজিক ১০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার) সকালের পরে সাঁজের দিকে স্প্রে করুন। স্প্রের পুর্বে খাবারযোগ্য ফল পেড়ে নিন।
  • শিমের ক্যাবেজ লুপার পোকা বা ঘোড়া পোকা দমনে অতি আক্রমণ না হলে রাসায়নিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন নেই। অতি আক্রমণে সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ কট বা ম্যাজিক ১০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) সকালের পরে সাঁজের দিকে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করুন। স্প্রের পুর্বে খাবারযোগ্য লতা ও ফল পেড়ে নিন। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে।
  • জাবপোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।
  • থ্রিপস আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।
  • শিমের পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা দমনে সাইপারমেথরিন জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ কট বা ম্যাজিক ১০ মিলি/ ১০ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার) সকালের পরে সাঁজের দিকে স্প্রে করুন। স্প্রের পুর্বে খাবারযোগ্য লতা ও ফল পেড়ে নিন। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সবজি বিষাক্ত থাকবে। 
  • শিমের কাঁঠালে পোকা দমনে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন।
  • শিমের পাতামোড়ানো পোকা দমনে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।

 

রোগবালাইঃ

  • এনথ্রাকনোজ/ফল পচা রোগ দমনে প্রপিকোনাজল জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ টিল্ট ২৫০ ইসি ৫ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
  • শিমের পাউডারী মিলডিউ রোগ দমনে রোগের আক্রমণ বেশি হলে টেবুকোনাজল+ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন গ্রাম নাটিভো) অথবা প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ টিল্ট) ১০ লিটার পানিতে মিলিলিটার (মুখ) হারে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  • শিমের মরিচা রোগ দমনে প্রপিকোনাজল জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ টিল্ট ২৫০ ইসি ৫ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক ছিটানোর পর ১৫ দিন ফল তোলা থাকে বিরত থাকুন।
  • শিমের পাতার দাগ রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ নোয়িন বা ব্যাভিস্টিন ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করুন। বালাইনাশক ছিটানোর পর ১৫ দিন ফল তোলা থাকে বিরত থাকুন।
  • শিমের উইল্ট রোগ দমনে কপার হাইড্রোক্সাইড জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ চ্যাম্পিয়ন ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে অথবা মাদার মাটিতে ট্রাইকোডারমা ৩০ গ্রাম প্রতি ৫০০ গ্রাম গোবরের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুনব্যবহারের সময় নিরাপদ পোষাক পরিধান করুন ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে নাবালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে ৭ থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।

ফলনঃ  জাতভেদে শতক প্রতি ৬০-৮০ কেজি

ফসল সংগ্রহঃ জাতভেদে বীজ বপনের ৯৫-১৪৫ দিন পর শিমের শুটি (পড) গাছ থেকে তুলে বাজারজাত করা যেতে পারে। আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফুল ধরে। ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে শিমের কচি শুঁটি, অপক্ব বীজ এবং পরিপক্ব বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহার অনুসারে ৫-৭ দিন অন্তর গাছ থেকে মোট ১৩-১৪ বার গুণগত মানসম্পন্ন  ফল সংগ্রহ করুন।