1. এক নজরে গাজর চাষ

উন্নত জাতঃ নান্টেস সুপেরিয়র,কুরোদা স্যানটিন, নান্টেস ইমপ্রুভ, ইম্পারেটর গ্লোব, কুরোদা ম্যাঙ্, নিউ কুরোদা, কুরোদা ৩৫ ইত্যাদি জাত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী।

পুষ্টিগুনঃ গাজরে প্রচুর ক্যারোটিন আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে ৮৫গ্রাম জলীয় অংশ, ০.৯ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১.২ গ্রাম আঁশ, ৫৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.২ গ্রাম আমিষ, ০.২ গ্রাম চর্বি, ১২.৭ গ্রাম শর্করা, ২৭ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ২.২ মি.গ্রা. লৌহ, ১০৫২০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন, ০.০৪ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, এবং ০.০৫ মিলিগ্রামভিটামিন বি-২ রয়েছে

বপনের সময়ঃ আশ্বিন থেকে পৌষ (মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) উপযুক্ত সময় ।

চাষপদ্ধতি: মাটির প্রকার ভেদে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হবেপ্রথম চাষ গভীর হওয়া দরকারবেড ও নালা পদ্ধতিতে গাজর চাষ করুন এতে সেচ ও নিষ্কাশন  সুবিধাজনক, পরিচর্যা সহজ, এবং সেচের পানির  অপচয় কম হয় সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। সরাসরি বীজ বুনলে, লাইন থেকে লাইন -১০ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ৩-৭ ইঞ্চি  দূরে লাগাতে হবে ।

বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ২০ গ্রাম ।

সারব্যবস্থাপনাঃ 

গাজর চাষে নিম্নোক্ত পরিমান সার শেষ চাষের সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন :

সারের নাম

শতক প্রতি সার

গোবর / কম্পোস্ট

৪০ কেজি

ইউরিয়া

৫০০ গ্রাম

ডিএপি / টিএসপি

৬০০ গ্রাম

এমওপি

৫০০ গ্রাম

জিপসাম

৬০০ গ্রাম


বীজ বপনের ৩ সপ্তাহ পর ৮০-১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৮০-১০০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। বীজ বপনের ৬ সপ্তাহ পর আবার ৮০-১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৮০-১০০ গ্রাম এমওপি সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। মাটির উর্বরতা বা মাটি পরীক্ষা করে সার দিলে মাত্রা সে অনুপাতে কম বেশি করুন।

সেচঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেচের পর চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।শীত ও খরার সময় জমিতে ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে জমে।ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমান মত আদ্রতা রাখতে হবে ।

আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ  বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার ফসল বোনার ২৫-৩০দিনের মধ্যে আগাছা বাছাই করতে হবে সেচ দেয়ার আগে আগাছা বাছাই করতে হবে

আবহাওয়া দুর্যোগঃ অতিবৃষ্টির কারণ জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে জমির পানি বের করার জন্য নালা তৈরি ও মেরামত করে রাখুন

পোকামাকড়ঃ

  • ফ্লি বিটল পোকাদমনে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক (যেমন কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০এসপি অথবা ফরাটাপ ২০মিলিলিটার প্রতি ১০লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।
  • জাব পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • গাজরের উড়চুঙ্গা পোকা দমনে ফিপ্রোনিল/ক্লোরপাইরিফস জাতীয় কীটনাশক (যেমন রিজেন্ট ১০-১৫মিলি) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে
  • গাজরের কাটুইপোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।

রোগবালাইঃ

  • গাজরের সাউদার্ব্লাইট রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০গ্রাম) অথবা সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- কুমুলাস ৪০গ্রাম অথবা গেইভেট ২০গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫দিন পরপর ২-৩বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে
  • গাজরের কালোপচা অথবা ভায়োলেট শিকর পচা অথবা নরম পচা অথবা ব্যাক্টেরিয়াজনিত পাতাপোড়া রোগ দমনের জন্য কপারঅক্সিক্লোরাইট জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- ডিলাইট ৫০ ডব্লিউপি অথবা গোল্ডটন ৫০ ডব্লিউপি ২০ গ্রাম)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে  ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে
  • গাজর ফেটে যাওয়া সমস্যায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে, অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার বা হরমোন প্রয়োগ করা যাবেনা।
  • গাজরের পাতাপোড়া রোগ দমনে টেবুকোনাজল+ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন ৫গ্রাম নাটিভো) অথবা প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫মিলি/১মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫দিন পরপর ২-৩বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে

সতর্কতাঃ বালাইনাশক/ কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুনব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুনব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনাবালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুনবালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল  কমপক্ষে সাত থেকে ১৫দিন পর বাজারজাত করুন

ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ৮০-৯০কেজি

সংরক্ষনঃ গাজর ঠাণ্ডা / শীতল স্থানে সংরক্ষন করতে হবে