এক নজরে মুলা চাষ

উন্নত জাতঃ বারি মূলা-১, বারি মূলা-২, বারি মূলা-৩, বারি মূলা-৪ ইত্যাদি রবি মৌসুমে চাষ উপযোগী ।

পুষ্টিগুনঃ মুলা পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। এতে প্রচুর ভিটামিন এ আছে। মুলা ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম মুলায় ৯২. গ্রাম জলীয় অংশ, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ০.৬ গ্রাম আঁশ, ২৮ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.৩ গ্রাম আমিষ, ০.১ গ্রাম চর্বি, ৫.৪ গ্রাম শর্করা, ১০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম, ০.৫ মি.গ্রা. লৌহ, ০.৪৩ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১, ৩৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, এবং অল্প পরিমানে ভিটামিন বি-২ রয়েছে।

বপনের সময়ঃ  আশ্বিন- কার্তিক (মধ্য সেপ্টেম্বর - মধ্য নভেম্বর) উপযুক্ত সময় ।

চাষপদ্ধতি: মাটির প্রকার ভেদে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হবে । প্রথম চাষ গভীর হওয়া দরকার । বেড ও নালা পদ্ধতিতে গাজর চাষ করুন এতে সেচ ও নিষ্কাশন  সুবিধাজনক, পরিচর্যা সহজ,   এবং সেচের পানির  অপচয় কম হয়। সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। সরাসরি বীজ বুনলে, লাইন থেকে লাইন ১৫ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ১১ ইঞ্চি  দূরে লাগাতে হবে ।

বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ৪০-৫০ গ্রাম ।

সারব্যবস্থাপনাঃ   

সারের নাম

শতক প্রতি সার

ইউরিয়া

০.২ কেজি

টিএসপি

১ কেজি

পটাশ

৪০০ গ্রাম

বোরিক এসিড

৪০ গ্রাম

গোবর বা কম্পোস্ট

৪০-৫০ কেজি

>শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোস্ট সার ও টিএসপি এবং ইউরিয়া ও পটাশ সারের অর্ধেক জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া ও পটাশ সার সমান অংশে যথাক্রমে বীজ বপনের তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।

পোকামাকড়ঃ

  • ফ্লি বিটল পোকাদমনে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক (যেমন কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০এসপি অথবা ফরাটাপ ২০মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।
  • জাব পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • মূলার বিছা পোকা দমনে এমামেক্টীন বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক ( যেমন প্রোক্লেইম ১০ গ্রাম) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড ১০ তরল অথবা  সিমবুশ ১০ তরল  ২০ মিলিলিটার / ৪ মুখ)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।

রোগবালাইঃ

  • মূলার পাতার দাগ রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০গ্রাম) অথবা সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- কুমুলাস ৪০গ্রাম অথবা গেইভেট ২০গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫দিন পরপর ২-৩বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে
  • মুলার গ্রে মোল্ড রোগ দমনের জন্য কপারঅক্সিক্লোরাইট জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- ডিলাইট ৫০ ডব্লিউপি অথবা গোল্ডটন ৫০ ডব্লিউপি ২০ গ্রাম)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে  ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে
  • মুলার মোজাইক রোগ দমনে জমিতে সাদা মাছি দেখা গেলে (বাহক পোকা) ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয়  কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। সকাল বেলা গাছে ছাই ছিটিয়ে দিলে এই পোকা গাছ থেকে পড়ে যাবে

সতর্কতাঃ বালাইনাশক/ কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুনব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুনব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনাবালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুনবালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল  কমপক্ষে সাত থেকে ১৫দিন পর বাজারজাত করুন

সেচঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে ও পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেচের পর চটা ভেঙ্গে দিতে হবে। শীত ও খরার সময় জমিতে ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমান মত আদ্রতা রাখতে হবে ।

আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ  বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার ফসল বোনার ২৫-৩০দিনের মধ্যে আগাছা বাছাই করতে হবেসেচ দেয়ার আগে আগাছা বাছাই করতে হবে

আবহাওয়াওদুর্যোগঃ অতিবৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে জমির পানি বের করার জন্য নালা তৈরি ও মেরামত করে রাখুন

ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ২৫০-৩০০ কেজি

সংরক্ষনঃ ফসল তুলে ধুয়ে আকার অনুসারে বাছাই করে নিন। ঠাণ্ডা / শীতল স্থানে সংরক্ষন করতে হবে