এক নজরে পুঁইশাক চাষ

 

উন্নত জাতঃ বারি পুঁইশাক-১, বারি পুঁইশাক-২

পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁইশাকে প্রোটিন আছে ২.২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট আছে ৪ গ্রাম, আয়রন ১০ মি. গ্রাম, জলীয় অংশ ৯২.০ গ্রাম, ১.৪ গ্রাম খনিজ,২৭ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি, চর্বি ০.২ গ্রাম, ১৬৪মিগ্রা ক্যালসিয়াম, ৬৪ মিগ্রা ভিটামিন-সি, ১২৭৫০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন।

বপনের সময়ঃ চৈত্র-ভাদ্র (মার্চ-আগস্ট) উপযুক্ত সময় ।

চাষপদ্ধতি: পুঁই শাক চাষ করার আগে চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে তৈরি করে নিতে হবে। চারা উৎপাদন করে লাগানো যায়। পুইশাকের চারা লাগানোর জন্য চারা থেকে চারা ২০ ইঞ্চি এবং লাইন থেকে লাইন ৪০ ইঞ্চি দুরুত্ত রাখুন।

বীজের পরিমানঃ  জাত ভেদে শতক প্রতি ৮ - ১০ গ্রাম

সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

শতক প্রতি সার

কম্পোস্ট

৬০ কেজি

ইউরিয়া

৮০০ গ্রাম

টিএসপি

৪০০ গ্রাম

ইউরিয়া ছাড়া বাকি সব সার শেষ চাষের সময় সমানভাবে ছিটিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিন। ইউরিয়া ছাড়া বাকি সব উপকরণ জমি তৈরির সময় দিতে হবে। চারা বয়স ১০-১৫ দিন হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং প্রথমবার ফসল তোলার পর তৃতীয় কিস্তি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

সেচঃ শুষ্ক মৌসুমে এক সপ্তাহ পর পর সেচ দিতে হবে। নতুবা শাক খসখসে হয়ে যাবে। জমিতে পানি যেন জমে না থাকে সেজন্য নালা তৈরি রাখতে হবে।

আগাছাঃ জমি  নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন । সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র  নিড়িয়ে আগাছা  বাছাই। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।চারা অবস্থা থেকে রসুন  গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বার নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকামাকড়ঃ

  • সুড়ঙ্গকারী পোকা- সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড ১০ তরল অথবা  সিমবুশ ১০ তরল  ২০ মিলিলিটার / ৪ মুখ)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ফ্লি বিটল পোকা-আক্রমণ বেশি হলে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড ১০ তরল অথবা  সিমবুশ ১০ তরল  ২০ মিলিলিটার / ৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

রোগবালাইঃ

  • গোড়া পচা রোগ-রোগের আক্রমণ বেশি হলে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • পাতায় দাগ রোগ-রোগের আক্রমণ বেশি হলে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- এইমকোজিম ২০ গ্রাম)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে  ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সতর্কতাঃ  বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।

ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১৯০ - ২০০ কেজি।

সংরক্ষনঃ বীজ কয়েক দিন রোদে শুকিয়ে ৮% আর্দ্রতায় এনে প্লাস্টিক/টিনের কৌটা/ড্রাম, পলিব্যাগ প্রভৃতি বায়ুরোধী পাত্রে বীজ পূর্ণ করে বায়ুরোধী মুখ আঁটকে সংরক্ষণ করুন। বীজপাত্র অপূর্ণ থাকলে বা  পাত্রের মুখ ভালভাবে না আঁটকালে বীজের গজানোর হার কমে যাবে।বীজ পাত্র চিহ্ন/লেবেল দিয়ে ঘরের ভিটিতে না রেখে শুকনা ও ঠান্ডা স্থানে মাচায় রাখুন।