এক নজরে মটরশুঁটি চাষ

 

উন্নত জাতঃ বারি মটরশুঁটি -১, বারি মটরশুঁটি -২, বারি মটরশুঁটি -৩, ইপসা মটরশুঁটি-১, ইপসা মটরশুঁটি-২, ইপসা মটরশুঁটি-৩

পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুঁটিতে ১৬.০ গ্রাম জলীয় অংশ, ২.২ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৪.৫ গ্রাম আঁশ, ৩১৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, আমিষ ১৯.৭ গ্রাম, ৫৬.৫ গ্রাম শর্করা, ৭৫মিগ্রা ক্যালসিয়াম, ৫.১ মিগ্রা লৌহ, ৩৯ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে। 

বপনের সময়ঃ মাঘ-ফাল্গুন মাস ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। উপযুক্ত সময় ।

চাষপদ্ধতি: মটরশুঁটির গাছ চারা অবস্থায় দুর্বল থাকে। তাই ভালো ফলনের জন্য জমি ৪-৫ টি চাষ দিয়ে মিহি করে তৈরি করা আবশ্যক।

বীজের পরিমানঃ  জাত ভেদে শতক প্রতি ২৫০ - ৩০০ গ্রাম

সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

শতক প্রতি সার

কম্পোস্ট

৪০ কেজি

ইউরিয়া

১৮০ গ্রাম

টিএসপি

৩০০ গ্রাম

পটাশ

১. কেজি

শেষ চাষের সময় সমস্ত সার প্রয়োগ করতে হবে।

সেচঃ অতিবৃষ্টির ফলে জমিতে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে বপনের পর হাল্কা সেচ দিতে হবে।

আগাছাঃ জমি  নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন । সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র  নিড়িয়ে আগাছা  বাছাই। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।চারা অবস্থা থেকে রসুন  গঠনের পূর্ব পর্যন্ত ২ থেকে ৩ বার নিড়ানি দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকামাকড়ঃ

  • কাটুই পোকা -আক্রমণ বেশি হলে কারটাপ জাতীয় কীটনাশক ( কেয়ার ৫০ এসপি অথবা সানটাপ ৫০ এসপি  ২০ মিলি / ৪ মূখ ) অথবা ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ( ক্যারাটে ২.৫ ইসি অথবা ফাইটার প্লাস ২.৫ ইসি ১৫ মিলি / ৩ মূখ ) ১০ লিটার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।  বালাইনাশক  স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • জাব পোকা- আক্রমণ বেশি হলে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। বালাইনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • লেদা পোকা - আক্রমণ বেশি হলে স্পর্শ বিষ যেমন সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ( সুপারথ্রিন -১০ ইসি বা সিমবুশ -১০ ইসি বা ফেনম ইত্যাদি ) প্রতি ১০ লিটার পানির সাথে ১০ মিলিলিটার হারে মিশিযে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করুন। বালাইনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

 রোগবালাইঃ

  • মটরশুঁটির লাল মরিচা রোগ - রোগের আক্রমণ বেশি হলে প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন: টিল্ট) ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১২ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা। । বালাইনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • মটরশুঁটির গ্রে মোল্ড রোগ - রোগের আক্রমণ বেশি হলে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। গাছের গোড়ার দিকে মাটি ভিজিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। বালাইনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • পাউডারি মিলডিউ রোগ- রোগের আক্রমণ বেশি হলে প্রপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ গ্রাম) অথবা টেবুকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন নাটিভো ৫ মিলিলিটার) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ৭ দিন পর পর ২/৩ বার। বালাইনাশক স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সতর্কতাঃ  বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।

ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১০ – ১৫ কেজি।

সংরক্ষনঃ বায়ুরোধী পাত্রে বীজ রাখা উচিত। বীজ রাখার জন্য প্লাস্টিকের ড্রাম উত্তম তবে বায়ুরোধী মাটি বা টিনের পাত্রে রাখা যায়। আর্দ্রতা রোধক মোটা পলিথিনেও বীজ মজুদ করা যেতে পারে। রোদে শুকানো বীজ ঠান্ডা করে পাত্রে ভরতে হবে। পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করতে হবে যেন বাতাস ঢুকতে না পারে। বেশি দিনের জন্য সংরক্ষনের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে বীজ রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।