সংক্ষিপ্ত আকারে মুগ ডাল চাষের তথ্য

উন্নত জাতঃ বারি মুগ-২, বারি মুগ-৩, বারি মুগ-৪, বারি মুগ-৫, বারি মুগ-৬, বারি মুগ-৭, বারি মুগ-৮, বিনামুগ-১, বিনামুগ-২, বিনামুগ-৩, বিনামুগ-৪, বিনামুগ-৫, বিনামুগ-৬, বিনামুগ-৭, বিনামুগ-৮। এর মাঝে বিনামুগ-১,বিনামুগ-৩ ও বিনামুগ-৪ শুধুমাত্র রবি, বিনামুগ-৬, বিনামুগ-৭ ও বিনামুগ-৮ শুধু খরিফ এবং বাকিসব জাত সারা বছরের জন্য উপযোগি।

পুষ্টিগুনঃ মুগ ডাল সহজে হজম হয় এবং এতে আমিষের পরিমাণ অনেক বেশি, জাত ভেদে প্রায় শতকরা ২১-২৪ ভাগ মুগ ডালের পুষ্টিগুন নানাবিধ। প্রতি ১০০ গ্রাম মসুরে আছে জলীয় অংশ-১০. গ্রাম, খনিজ পদার্থ- . গ্রাম, আঁশ-. গ্রাম, খাদ্যশক্তি-৩৪৮ কিলোক্যালরি, আমিষ-২৪. গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ৭৫ মিলিগ্রাম, লৌহ- . মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন-৪৯ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-- .১৫ মিলিগ্রাম শর্করা-৫৯. গ্রাম ইত্যাদি।

বপনের সময়ঃ খরিফ-১ মৌসুমে: ১-৩০ ফাল্গুন (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৫ মার্চ)। খরিফ-২ মৌসুমে: শ্রাবণ-ভাদ্র (১৫ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর)। রবি মৌসুমে বরিশাল এলাকার জন্য বোনার জন্য পৌষ-মাঘ (১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি) উপযুক্ত সময়।

বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে ছিটিয়ে বুনলে ১২০-১৬০ গ্রাম, লাইনে বুনলে ১০০-১৩০ গ্রাম ।

চাষপদ্ধতি: ছিটিয়ে অথবা লাইন উভয় পদ্ধতিতেই বীজ বপন করা যায়। লাইনে বপনের ক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১ ফুট রাখতে হবে। জমিতে জো থাকা অবস্থায় ২/৩ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হবে। সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।

সার ্যবস্থাপনাঃ

ফসলের সার সুপারিশ (জাত ভিত্তিক) (কেজি/হেক্টর) দেয়া হল

সারের পরিমাপ

জাতের নাম

 

বারি মুগ (সব)

বিনামুগ-১, বিনামুগ-৩, বিনামুগ-৪

বিনামুগ-২, বিনামুগ-৫, বিনামুগ-৬, বিনামুগ-৭, বিনামুগ-৮

ইউরিয়া

৪০ কেজি

৪০ কেজি

৪০ কেজি

টি এস পি

১০০ কেজি

১০০ কেজি

১০০ কেজি

এম পি

৫৫ কেজি

৫৫ কেজি

৫৫ কেজি

জিপসাম

 

৭০ কেজি

৭০ কেজি

জিংক

 

৪ কেজি

৫ কেজি

মলিবডেনাম

 

২ কেজি

২ কেজি

         

সেচঃ সাধারণত মুগ চাষাবাদের সময় সেচের প্রয়োজন হয় না। খরিফ মৌসুমে বীজ বপনের আগে খরা হলে সেচ দিয়ে জমিতে জো আসার পর বীজ বপন করতে হবে। জমি একেবারেই শুকিয়ে গেলে হালকা সেচ দিয়ে নিড়ানি দিন। জমিতে গোড়া পচা অথবা অন্যান্য ছত্রাকের আক্রমন হলে কোনভাবেই সেচ দেয়া যাবে না, এমন অবস্থায় সেচ দিলে ছত্রাক দ্রুত পুরো জমিতে ছড়িয়ে পরতে পারে।

আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার। ফসল বোনার ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা বাছাই করতে হবে। সেচ দেয়ার আগে আগাছা বাছাই করতে হবে।

আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ৪-৭ কেজি।

 

 

পোকামাকড়ঃ

Ø ফলছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোথায়ারানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশক (যেমন ভলিউম ফ্লেক্সি ৫ মিলিলিটার অথবা ১মুখ ) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার।

Ø কান্ডের মাছি আক্রান্ত জমিতে কার্বোসালফান জাতীয় কীটনাশক (যেমন-মার্শাল বা সানসালফান ২০ মিলিলিটার /৪ মুখ) ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ থেকে চারা গজানোর ৩, ৭, ১৪, ২১ দিনের মধ্যে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। বিশেষ করে প্রথম ৩টি স্প্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ।

Ø বিছাপোকা দমনে আক্রমণ বেশি হলে এমামেক্টীন বেনজোয়েট জাতীয় কীটনাশক ( যেমন প্রোক্লেইম ১০ গ্রাম) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন-রিপকর্ড ১০ তরল অথবা সিমবুশ ১০ তরল ২০ মিলিলিটার / ৪ মুখ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।

Ø সাদা মাছি দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।

Ø জাবপোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।

রোগবালাইঃ

Ø পাতায় দাগ রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।

Ø গোড়া পচা রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। গাছের গোড়ায় মাটি ভিজিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

Ø মুগের পাউডারি মিলডিউ রোগ দমনে টেবুকোনাজল+ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন ৫ গ্রাম নাটিভো ৭৫ পাউডার) অথবা প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ২৫০ তরল ৫ মিলিলিটার) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

  • পাতায় হলদে মোজাইক রোগের বাহক পোকা (জাবপোকা) দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।

সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন । ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।

সংরক্ষনঃ মুগডাল ফল ভালোভাবে শুকিয়ে, বীজ বস্তা, ড্রাম অথবা পলিথিনে ভরে শুকনা এবং ঠাণ্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন। শুসরী পোকাসহ আন্যান্য গুদামজাত পোকা দমনে প্রতি ১০০ কেজি বীজের বস্তার মধ্যে একটি ফসটক্সিন ট্যাবলেট দিয়ে বস্তার মুখ বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। বীজের পরিমান কম হলে নিমের তেল অথবা নিম পাতার শুকনো গুড়া ব্যবহার করতে পারেন। সংরক্ষিত বীজ মাঝে মাঝে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।