এক নজরে লেবু চাষ

উন্নত জাতঃ সীডলেস লেবু, বারি লেবু-, বারি লেবু-২, বারি লেবু-৩, বাউ কাগজী লেবু-১, বাউ লেবু-২, বাউ লেবু-৩ ইত্যাদি সারা বছর চাষ উপযোগী

পুষ্টিগুনঃ লেবুর প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী অংশে ৮৮.৪ গ্রাম জলীয়, ০.৬মিলি গ্রাম খনিজলবণ, ১.৭ গ্রাম আঁশ, ০.৩ গ্রাম আমিষ, ১০ গ্রাম শর্করা, ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৩ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ৪৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি ও ৪৭ মিলিগ্রাম খাদ্যশক্তি রয়েছে।

বপনের সময়ঃ মে থেকে অক্টোবর (জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক) উপযুক্ত সময় ।

চাষপদ্ধতি: মাটির প্রকার ভেদে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হবে । প্রথম চাষ গভীর হওয়া দরকার । এতে সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাজনক, পরিচর্যা সহজ, এবং সেচের পানির অপচয় কম হয় ।।সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। লাইন থেকে লাইন ৯৮-১১৮ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ৯৮-১১৮ ইঞ্চি দূরে লাগাতে হবে ।

বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে শতক প্রতি -৭টি

সারব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

 

সারের পরিমাপ

১-২ বছর

৩-৫ বছর

৬ বছরের অধিক

গোবর/কম্পোস্ট

১৫ কেজি

২০ কেজি

২৫কেজি

ইউরিয়া

১৫০-২০০গ্রাম

৪০০ গ্রাম

৫০০ গ্রাম

টিএসপি

১৫০-২০০গ্রাম

৩০০ গ্রাম

৪০০ গ্রাম

এমওপি

১৫০-২০০ গ্রাম

৩০০ গ্রাম

৪০০ গ্রাম

 

সার প্রয়োগের পদ্ধতিঃ সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করুন। প্রথম কিস্তি বর্ষার শুরুতে (বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য), ২য় কিস্তি মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) এবং তৃতীয় কিস্তি মাঘ-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী)।পাহাড়ী এলাকায় অথবা পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে শাবল দ্বারা গর্ত করে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের গোড়া থেকে সোয়া ২ হাত থেকে সোয়া ৩ হাত দূর থেকে শুরু করে ৭.৫ হাত পর্যন্ত সার প্রয়োগ করুন। গাছে সার প্রয়োগের পর এবং খরার সময় বিশেষ করে ফলের গুটি আসার সময় পানি সেচ দিন। তাছাড়া গোড়ার আগাছা পরিষ্কার ও মাটি ঢেলা ভেঙ্গে দিন। মাটির উর্বরতা ভেদে সারের মাত্রা কম বেশি করুন।লেবু গাছের জন্য বোরণ ও ম্যাগনেশিয়াম সারও প্রয়োজন।

 

পোকামাকড়ঃ

  • লেবুর পিঁপড়া দমনে ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ( ক্যারাটে ২.৫ ইসি অথবা ফাইটার প্লাস ২.৫ ইসি ১৫ মিলি / ৩ মূখ ) ১০ লিটার প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার
  • লেবুর পাতা মোড়ানো পোকা, লেবুর পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা, লেবুর সাইলিড বাগ, লেবুর কুশন স্কেল পোকা, লেবুর মিলিবাগ বা ছাতরা পোকা ও প্রজাপতি দমনে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ( যেমন সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার ) অথবা প্রপিকোনাজল জাতীয় কীটনাশক ( টিল্ট ২৫০ইসি ৫মিলিলিটার) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার
  • লেবুর সাদা মাছি ও জাবপোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার
  • লেবুর মাকড় দমনে সালফার গ্রুপের (কুমুলাস ডিএফ বা রনোভিট ৮০ ডব্লিউজি বা থিওভিট ৮০ ডব্লিউজি বা সালফোলাক ৮০ ডব্লিউজি, ম্যাকসালফার ৮০ ডব্লিউজি বা সালফেটক্স ৮০ ডব্লিউজি) প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে
  • লেবু গাছের কান্ড ছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোথায়ারানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশক (যেমন ভলিউম ফ্লেক্সি ৫ মিলিলিটার অথবা ১মুখ ) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার

রোগবালাইঃ

  • লেবুর পাউডারি মিলডিউ দমনে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন ( কুমুলাস ৪০ গ্রাম বা গেইভেট বা মনোভিট ২০ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: গোল্ডাজিম বা এমকোজিম ১০ মিলি ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন
  • লেবুর ঢলে পড়া রোগ, লাল মরিচা রোগ, গামোসিস রোগ ও আগামরা রোগ দমনের জন্য কপার অক্সিক্লোরাইট জাতীয় ( কুপ্রাভিট ৪০ গ্রাম ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন অথবা খৈলের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করুন
  • লেবুর স্ক্যাব বা দাদ রোগ, লেবুর ক্যাংকার রোগ দমনে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ( যেমন সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার ) অথবা ক্লোরপাইরিফস জাতীয় কীটনাশক ( রিজেন্ট ১০-১৫মিলিলিটার) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার
  • লেবুর সুটিমোল্ড রোগ দমনে প্রপিকোনাজল জাতীয় কীটনাশক ( টিল্ট ২৫০ইসি ৫মিলিলিটার) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার

সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুনব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুনব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনাবালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন

আগাছাঃ জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র নিড়িয়ে আগাছা বাছাই

সেচঃ খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ প্রয়োগ করুন জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না বিধায় বর্ষাকালে গোড়ায় পানি জমতে দিবেন না

আবহাওয়া দুর্যোগঃ সারিতে বুনুন, যাতে জমিতে সেচেভ নালা তৈরি করে রাখুন বাত্তি ফল তুলে ফেলুন ঝর্না দিয়ে গাছের গোড়ায় সেচ দিন মালচিং এর ব্যবস্থা নিন

ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ৪০-৯০কেজি

সংরক্ষনঃ ফসল তুলে ছায়ায় সংরক্ষণ করুন বেশি দিন সাধারণ তাপে রাখা যায় না