এক নজরে আনারস চাষ

উন্নত জাতঃ জায়ান্ট কিউ, হানি কুইন, ঘোড়াশাল, জলঢুপি ইত্যাদি উচ্চফলনশীল জাত চাষ করা যায়।

পুষ্টিগুনঃ আনারস ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি এর উত্তম উৎস । প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে খনিজ পদার্থ ০.২ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩০ (কিলোক্যালোরি), আমিষ ০.৯ গ্রাম, শর্করা ৬.২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন ইত্যাদি রয়েছে।

বপনের সময়ঃ মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রাহায়ণ / অক্টোবর- নভেম্বের।

চাষপদ্ধতিঃ জমি থেকে ১৫ সেমি. উঁচু এবং সোয়া ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। এক বেড থেকে অপর বেডের মধ্যে ৪০-৫০ সেমি. ফাঁকা রাখতে হবে। দুই সারিতে চারা রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সেমি. রাখতে হবে।

সারব্যবস্থাপনাঃ

যেহেতু নানা কারণে গাছের সংখ্যা কম বেশ হয় তাই সারের পরিমাণ হেক্টরের বদলে গাছ প্রতি দেখানো হলো। গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে আনারস চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করুন।

সারের নাম

গাছ প্রতি সার

কম্পোস্ট

২৯০-৩১০ গ্রাম

ইউরিয়া

৩০-৩৬ গ্রাম

টিএসপি

১০-১৫ গ্রাম

পটাশ

২৫-৩০ গ্রাম

জিপসাম

১০-১৫ গ্রাম

গোবর, জিপসাম ও টিএসপি বেড তৈরীর সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া ও পটাশ সারি চারা রোপণের ৪-৫ মাস পর থেকে শুরু করে ৫ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। অন্যান্য সার বেড তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

সেচঃ প্রয়োজনে জমিতে সেচ দিন। শুকনো মৌসুমে ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।

আগাছাঃ আগাছা দমনের জন্য জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে আগাছা পরিষ্কার, বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার এবং পরিষ্কার কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন ।সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র নিড়িয়ে আগাছা বাছাই ।

আবহাওয়া দুর্যোগঃ অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি দ্রুত বেড় করে দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পোকামাকড়ঃ

  • আনারসের ছাতরা পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • আনারসের পাতা মোড়ানো পোকা দমনে ক্লোরপাইরিফস জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ ডারসবান ২০ ইসি বা পাইক্লোরেক্স ২০ ইসি ২০ মিলিলিটার ) অথবা ম্যালাথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ ফাইফানন ২৫ মিলিলিটার )১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার বিকালে স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • আনারসের স্কেল/ খোসাপোকা দমনে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ( যেমন সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন ।
  • ফলের মাকড় দমনে সালফার জাতীয় বালাইনাশক (যেমন সালফেক্স ৮০ ডব্লিউপি, সালফটক্স ৮০ ডব্লিউপি, ম্যাক সালফার ৮০ ডব্লিউপি, রনভিট ৮০ ডব্লিউজি ১৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ) ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ফলের মাছি পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

রোগবালাইঃ

  • আনারসের পাতার সাদা দাগ রোগ দমনে জিনেব গ্রুপের ছত্রাক নাশক (যেমন: ইন্ডোফিল-জেড-৭৮ ২০ গ্রাম ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • আনারসের হার্ট রট রোগ দমনে পানিতে জিনেব গ্রুপের ছত্রাক নাশক (যেমন: ইন্ডোফিল-জেড-৭৮ ২০ গ্রাম ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুনব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুনব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনাবালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুনবালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫দিন পর বাজারজাত করুন

ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ১২৫-১৮০ কেজি

সংগ্রহঃ ফলের মুকুট থাকা আবশ্যক কিন্তু বড় মুকুট রপ্তানীর ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। ফুল আসার ৬৫-৭৫ দিন পর মুকুটের কেন্দ্রীয় মেরিস্টেম লোহার তৈরী অগারের সাহায়্যে অপসারণ করা হলে ফলের বৃদ্ধি না কমিয়ে মুকুট ক্ষুদ্র থাকবে। মধ্য জৈষ্ঠ্য থেকে মধ্য ভাদ্র (জুন-আগস্ট) মাসে সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত ফুল ধরার ৪-৫ মাস পর ফল পাকে।সধারণত ফলের নিচের দিকের ৩ ভাগের ১ ভাগ চোখ হলদে হয়ে আসে তখন তা তোলার উপযুক্ত হয়।