এক নজরে গম চাষ

উন্নত জাতঃ কাঞ্চন , অঘ্রানি , আকবর , বারি গম -১৮ , বারি গম - ১৯, বারি গম -২০, বারি গম -২১, বারি গম -২২, বারি গম -২৩ , বারি গম -২৪  উল্লেখযোগ্য ।

পুষ্টিমান : প্রতি ১০০ গ্রাম গমের আটায় পাওয়া যাবে ৩৬৪ কিলো ক্যালরি, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম, খাদ্যআঁশ ২.৭ গ্রাম, প্রোটিন ১০ গ্রাম

বপনের সময়ঃ গমের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহের বপনের উপযুক্ত সময় হলো কার্তিকের শেষ থেকে অগ্রহায়ণর তৃতীয় সপ্তাহ বা নভেম্বরের ২য় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ।

চাষপদ্ধতি: বীজ সারিতে এবং ছিটিয়ে বোনা যায়। তবে সারিতে বীজ বপন করা উত্তম। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরীর পর লাঙ্গল দিয়ে সরু নালা তৈরী করে ৮ ইঞ্চি দূরত্বের সারিতে ১.৫-২.০ সেমি(০.৫  - ০.৮ ইঞ্চি)। গভীরে বীজ বপন করতে হবে। আমন ধান কাটার পর জমিতে ‘জো’ আসলে পাওয়ার টিলারচালিত বীজ বপন যন্ত্রের সাহায্যে একচাষে সারিতে বীজ বপন করা যায়।

বীজের পরিমানঃ  প্রতি শতকে ৫০০ গ্রাম   ।

সার ্যবস্থাপনাঃ  সেচের ব্যবস্থা থাকলে প্রতি শতকে ইউরিয়া  ৭৩০-৮৯০ গ্রাম, টিএসপি ৫৭০-৭৩০ গ্রাম, এমপি ১৬০-২০০ গ্রাম, জিপসাম ৪৫০-৫০০ গ্রাম, গোবর/কম্পোষ্ট ৩০-৪০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে । আর সেচের ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি শতকে ইউরিয়া ৫৭০-৭৩০ গ্রাম, টিএসপি ৫৭০-৭৩০ গ্রাম, এমপি ১৬০-২০০ গ্রাম, জিপসাম ২৮০-৩৬৫ গ্রাম, গোবর/কম্পোষ্ট ৩০-৪০ কেজি প্রয়োগ করতে হবে । জৈব সারঃ বীজ বপনের ৭-১০ দিন পূর্বে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া। পরিমাণমত এ সার দিলে তিন ভাগের ইউরিয়া সার কম লাগবে। অন্যান্য সারঃ সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সেচছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

 পোকামাকড়ঃ

  • জাব পোকা দমনে  ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • গমের স্টিং বাগ দমনে  কার্বারিল জাতীয়  কীটনাশক(  যেমন:  সেভিন ৮৫  ডব্লিউপি ২৭  গ্রাম) অথবা   ডাইমিথোয়েট জাতীয় কীটনাশক  যেমন ( রোগর অথবা টাফগর ২০ মিলি)  ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার স্প্রে করুন ।
  • কলার পাতা ও ফলের বিটল দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার স্প্রে করুন ।

রোগবালাইঃ

  • পাতা ঝলসানো রোগ /পাতার দাগ কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ কুপ্রাভিট ১০ গ্রাম বা চ্যাম্পিয়ন ৭৭ ডব্লিউপি ২০ গ্রাম ) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে অথবা  প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ  টিল্ট ২৫০ ইসি অথবা প্রাউড ২৫ ইসি অথবা   পোটেন্ট ২৫০ ইসি @  ২০ মিলিলিটার)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার শেষ বিকেলে ফসলে স্প্রে করুন
  • পাতার মরিচা রোগ দমনের জন্য প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ  টিল্ট ২৫০ ইসি অথবা প্রাউড ২৫ ইসি অথবা  অথবা  পোটেন্ট ২৫০ ইসি অথবা    ২০ মিলিলিটার)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে  ১০ দিন পরপর ২-৩ বার শেষ বিকেলে ফসলে স্প্রে করুন ।ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • গমের  আলগা ঝুল রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ ব্যাভিস্টিন/ নোইন ইত্যাদি ১০ গ্রাম  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ২-৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করুন।  ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • গোড়া পচা রোগ দমনে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ ব্যাভিস্টিন/ নোইন ইত্যাদি ১০ গ্রাম  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ২-৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করুন।  ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • বীজের কালো  দাগ রোগ দমনে  প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ  টিল্ট ২৫০ ইসি অথবা প্রাউড ২৫ ইসি অথবা  অথবা  পোটেন্ট ২৫০ ইসি অথবা    ২০ মিলিলিটার)  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে  ১০ দিন পরপর ২-৩ বার শেষ বিকেলে ফসলে স্প্রে করুন

 

সতর্কতাঃ  বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না

আগাছাঃ সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা দমন করুন। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। ৪০ দিন আগাছা মুক্ত রাখুন।

সেচঃ মাটির প্রকার ভেদে সাধারণত ২-৩ টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পরে), দ্বিতীয় সেচ গমের শীষ বের হওয়ার সময়। (বপনের ৫৫-৬০ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) দিতে হবে।

আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে

ফলনঃ  জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ১৪-১৮    কেজি

সংরক্ষনঃ গম ভাল করে শুকানোর পর ঠাণ্ডা করে  চটের বস্তায়/ড্রামে ভড়র সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত রাখুন ।পলি ব্যাগে ভরে চটের বস্তায়/কেরোসিন/বিস্কুটের টিন, ধাতব বা প্লাস্টিকের ড্রাম, পলিথিন ব্যাগ ইত্যাদি গমবীজ সংরক্ষণের জন্য উত্তম। বীজ সংরক্ষণের পাত্রটি পরিষ্কার, শুকনো, বায়ুরোধী ও ছিদ্রমুক্ত হতে হবে। বীজ  দিয়ে  পাত্র ভর্তি করতে হবে যাতে পাত্রের ভিতরে ফাঁকা জায়গা  রাখবেন না ।পাত্র ভর্তি না হলে কাপড় বা  কাগজের বিছিয়ে শুকনো পরিষ্কার  বালু ভরে ফাঁকা জায়গা পূর্ণ করে ভালভাবে ঢাকনা আটকিয়ে মাচা বা কাঠের পাটাতনের উপর রাখুন।