এক নজরে কাঁকরোল চাষ

উন্নত জাতঃ আসামি, মনিপুরী ইত্যাদি খরিফ মৌসুমে চাষ উপযোগী ।

পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁকরোলে ৭৯.৪ গ্রাম জলীয় অংশ রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিগুন ও রয়েছে যেমন, খনিজ পদার্থ-০.৯ গ্রাম,খাদ্যশক্তি-৮০ কিলোক্যালরি, আমিষ-২.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম-৩৬ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন-৪১০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-২-০.০৬ মিলিগ্রাম ও শর্করা-১৭.৪ গ্রাম ইত্যাদি।

বপনের সময়ঃ ফাল্গুন-বৈশাখ (মধ্য ফেব্রুয়ারি-মধ্য মে) উপযুক্ত সময় ।

চাষপদ্ধতি: মাটির প্রকার ভেদে ৪-৬ টি চাষ ও মই দিতে হবে। প্রথম চাষ গভীর হওয়া দরকার। এতে পরিচর্যা সহজ এবং সেচের পানির  অপচয় কম হয় সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। লাইন থেকে লাইন ৩৮ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারা ৩০ ইঞ্চি  দূরে লাগাতে হবে ।

বীজের পরিমানঃ প্রতি শতকে ৬-৭ ইঞ্চি লম্বা ১০-১২ টি মোথা ৯ টি  স্ত্রী গাছের জন্য ১ টি পুরুষ মোথা দরকার

সার ্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

হেক্টর প্রতি সার

শতক প্রতি সার

পঁচা গোবর

৫-১০ টন

৯৬০ গ্রাম

ইউরিয়া

২৪০ কেজি

৮০০ গ্রাম

টি এস পি

২০০ কেজি

৮০০ গ্রাম

এম ও পি

২০০ কেজি

৪০০ গ্রাম

জিপসাম

১০০ কেজি

৪০০ গ্রাম

ডলোচুন

১০০ কেজি

২০-৪০ কেজি

হেক্টর প্রতি ৫-১০ টন গোবর সার জমির তৈরির সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। ২০০ কেজি হারে টিএসপি, ৮০ কেজি হারে এমওপি এবং ১০০ কেজি জিপসাম চারা লাগানোর ১৫ দিন আগে মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। ২৪০ কেজি ইউরিয়া ও ১২০ কেজি এমওপি সার সমান ৩ ভাগে মোথা লাগানোর ২০, ৪০ এবং ৬০ দিন মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। ডিএপি প্রয়োগ করলে টিএসপি এবং এমওপি প্রয়োগ করলে এমপি সার প্রয়োগ করবেন না। প্রতি কেজি ডিএপি সার প্রয়োগে ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া কম দিন। মাটি অধিক অম্লীয় হলে হেক্টরপ্রতি ৮০-১০০ কেজি ডলোচুন শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। মাটির উর্বরতা বা মাটি পরীক্ষা করে সার দিলে মাত্রা সে অনুপাতে কম বেশি করুন।

সেচঃ জমি একেবারেই শুকিয়ে গেলে হালকা সেচ দিয়ে নিড়ানি দিন বৃষ্টি বা অতিরিক্ত সেচের পানি জমিতে জমতে দিবেন না এর পর  কোদাল/নিড়ানি দিয়ে মাটির ওপরের চটা ভেঙে দিন

আগাছাঃ জমি নিয়মিত জমি পর্যবেক্ষণ করুন সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা দমন করতে হবে সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র  নিড়ানি দিয়ে আগাছা  দমন করতে হবে

আবহাওয়া দূর্যোগঃ  লাইনে বুনুন, যাতে জমির অতিরিক্ত বৃষ্টিরপানি বের করার নালা রাখুন জমির অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি বের করা  ব্যবস্থা  রাখুন

পোকামাকড়ঃ

  • ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামিথক্সাম+ক্লোথায়ারানিলিপ্রল জাতীয় কীটনাশক (যেমন ভলিউম ফ্লেক্সি ৫ মিলিলিটার  অথবা ১মুখ ) অথবা সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার  অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার
  • কাঁঠালে পোকা দমনে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ( যেমন সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না
  • ফলের মাছি পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমন ওস্তাদ ২০ মিলিলিটার অথবা ম্যাজিক অথবা কট ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০ লিটার পানিতে  মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০-১২ দিন পরপর ২/৩ বার
  • থ্রিপস, সাদামাছি ও জাবপোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার / ২মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।

রোগবালাইঃ

  • ডাউনি মিলডিউ ও গামি স্টেম ব্লাইট রোগ দমনে ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক ( যেমনঃ রিডোমিল গোল্ড ২০ গ্রাম ) ১০ লিটার পানিতে  মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করুন
  • কাঁকরোলের শুটি মোল্ড রোগ দমনের জন্য ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমন সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন এবং ছত্রাক দমনে প্রপিকোনাজল জাতীয় বালাইনাসক (যেমন: টিল্ট ২৫০ ইসি ৫ মিলিলিটার) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করুন
  • মোজাইক ভাইরাস রোগদমনে জমিতে সাদা মাছি,জাব পোকা  দেখা গেলে (বাহক পোকা) ইমিডাক্লোরোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক (যেমন এডমায়ার অথবা টিডো ১০ মি.লি. ২ মুখ ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে সকাল বেলা গাছে ছাই ছিটিয়ে দিলে এই পোকা গাছ থেকে পড়ে যাবে৷ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুনব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুনব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনাবালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুনবালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল  কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন

ফলনঃ জাতভেদে শতক প্রতি ফলন ৮০-৯৫ কেজি

সংগ্রহঃ কচি অবস্থায় সংগ্রহ করা উচিত ফুল ফোটার ১০-১২ দিন পর কাঁকরোল সংগ্রহের উপযোগী হয় কাঁকরোল এমন পর্যায়ে সংগ্রহ করা উচিত যখন ফলটি পূর্ণ আকার প্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু পরিপক্ক হয়নি