এক নজরে লিচু চাষ

 

উন্নত জাতঃ বারি লিচু- ১, বারি লিচু- ২, বারি লিচু- ৩

পুষ্টিগুনঃ প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপযোগী লিচুতে জলীয় অংশ ৮৪. ১ভাগ, আমিষ ১.১ ভাগ , স্নেহ .২ গ্রাম, খনিজ .৫ গ্রাম, শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিগ্রা, লৌহ ০.৭ মিগ্রা, ভিটামিন বি-১০.০২ মিগ্রা, ভিটামিন সি ৩১ মিগ্রা ও খাদ্য শক্তি ৬১ কিলোক্যালরি।

বপনের সময়ঃ মধ্য মাঘ-মধ্য চৈত্র ও মধ্য শ্রাবণ-মধ্য ভাদ্র।

চাষপদ্ধতি: রোপণ দূরত্বঃ ৮-১০ মিটার

গর্তের আকারঃ ১ হাত × ১ হাত ×১ হাত

গর্ত করার পর চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে গর্ত প্রতি ৫০০ গ্রাম টিএসটি, ৪০০ গ্রাম, পটাশ ও  ৩০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রতিটি ২৫০ গ্রাম করে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রাখতে হবে।জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় এবং ভাদ্র-আশ্বিন মাস চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। এসময় গর্তের মাটি উলট পালট করে করে নিতে হবে। চারা রোপণের পর খুটি  দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং হালকা পানি সেচ দিতে হবে।

বীজের পরিমানঃ  জাত ভেদে শতক প্রতি ২০-২৫ কেজি

সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

গর্ত প্রতি সার

কম্পোস্ট

২৫ কেজি

টিএসপি

৭০০ গ্রাম

পটাশ

৪৫০ গ্রাম

 গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে সোজাভাবে লাগাতে হবে। রোপণের ৩ মাস পর ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা দরকার। পূর্ণ বয়স্ক ফলন- গাছের জন্য ইউরিয়া সার ২ কেজি, টিএসপি সার ৩.৫ কেজি, এমওপি সার ২ কেজি, জিপসাম সার ২৬০ গ্রাম, জিংক সালফেট সার ৬০ গ্রাম, গোবর ১৫ কেজি এবং ৯ কেজি ছাই প্রয়োগ করতে হয়।

সেচঃ শুষ্ক মৌসুমে বিশেষত চারা গাছে এবং বয়স্ক গাছে ফলের বাড়ন্ত অবস্থায় মাসে সেচ দিন, এতে ফলের ফলন ও গুণগতমান ভাল হয়।

আগাছাঃ সেচ ও সার দেবার পর জো আসা মাত্র আগাছা বাছাই। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে। গাছ খুব ঘন থাকলে পাতলা করে দিতে হবে।

আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ অতি বৃষ্টির কারনে জমিতে পানি বেশি জমে গেলে নালা তৈরি করে তাড়াতাড়ি পানি সরানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকামাকড়ঃ

  • লিচুর ফল ছিদ্রকারী পোকা- সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ( যেমন: কট বা রিপকর্ড বা সিমবুস বা ফেনম বা এরিভো ১০ ইসি ১০ মিলিলিটার )  প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার পুরো গাছে স্প্রে করুন।
  • লিচুর মাকড়- সালফার জাতীয় বালাইনাশক (যেমন সালফেক্স ৮০ ডব্লিউপি, সালফটক্স ৮০ ডব্লিউপি, ম্যাক সালফার ৮০ ডব্লিউপি, রনভিট ৮০ ডব্লিউজি ১৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার  পানিতে  মিশিয়ে )  ১০ দিন পরপর ২-৩ বার  স্প্রে করুন।

রোগবালাইঃ

  •  লিচুর পাউডারি মিলডিউ রোগ- সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন: কুমুলাস ডিএফ ৪০ গ্রাম ১০ লিটার বা থিওভিট ৪০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ৫-৭ দিন পর পর ২-৩ বার শেষ বিকেলের দিকে স্প্রে করুন।
  • লিচুর পাতার দাগ রোগ- কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন- নোইন অথবা এইমকোজিম ২০ গ্রাম) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করতে হবে
  • লিচুর সুটিমোল্ড রোগ- প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ মিলি/ ১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে  ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে ।
  • লিচুর এনথ্রাকনোজ রোগ- প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমন টিল্ট ৫ মিলি/ ১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে  ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
  • লিচুর পাতা পোড়া রোগ- মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক (ডাইথেন এম ৪৫) ২০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করুন। 

সতর্কতাঃ  বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যাবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন। বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যাবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবে না।

ফলনঃ জাত ভেদে শতক প্রতি ফলন ২০-২৪ কেজি।

সংরক্ষনঃ ছায়ায় সংরক্ষণ করুন। মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিন। বেশি দিন সংরক্ষণ এর জন্য হিমাগারে রাখুন।