পটল এর চাষপদ্ধতির তথ্য

ফসল : পটল

চাষপদ্ধতি :

পটলের জমি গভীর করে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করে নিতে হয়। এতে পটলের মূলের বিস্তার সহজ হয় এবং গাছ সহজেই মাটি থেকে পানি ও পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে। জমি চাষ করার পর বেড তৈরি করে নিতে হয়ে। বেড পদ্ধতিতে পটল চাষ করা ভাল। এতে বর্ষাকালে ক্ষেত নষ্ট হয় না। রোপণ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে বেডের প্রস্থ ও রোপণ দূরত্ব কম-বেশি হয়ে থাকে। জমির দৈর্ঘ্য বরাবর সাড়ে ৫ হাত  চওড়া বেড তৈরি করে নিয়ে পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝে ১ ফুট প্রস্থ এবং ৮ ইঞ্চি গভীর নালা রাখতে হয়। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়।  প্রতি বেডে সাড়ে ৪ হাত দূরত্বে লাঙ্গল দিয়ে ৫-৬ ইঞ্চি গভীর করে দুটি নালা করে নিতে হয়।  প্রতি নালায় ২০ ইঞ্চি পর পর ৫-৬ ইঞ্চি গভীরে শাখা কলম লাগাতে হয়। দেশের বৃষ্টিবহুল এলাকায়, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে, চাষের জন্য বেডের প্রস্থ হবে সোয়া ৩ হাত। প্রতি বেডের মাঝ বরাবর এক সারিতে সোয়া ৩ হাত দূরে দূরে  মাদা তৈরি করে মাদায় চারা রোপণ করতে হয়।  মাদার আকার হবে যথাক্রমে ২০ ইঞ্চি × ২০ ইঞ্চি × ২০ ইঞ্চি। এক্ষেত্রে সেচনালার প্রস্থ হবে ১৬-১৮ ইঞ্চি।  একসঙ্গে চারা লাগালেও স্ত্রী ফুলের ১০-১৫ দিন পরে পটলের পুরুষ ফুল ফোটে। পুরুষ ফুলের অভাবে প্রথম দিকে ফোটা স্ত্রী ফুলগুলিতে ফল হয় না। তাই মূল জমিতে সারিতে বা মাদায় প্রতি ১০ টি স্ত্রী গাছের পর পর একটি পুরুষ গাছ ১০-১৫ দিন আগেই লাগানো উচিত।

সুষ্ঠু পরাগায়নের জন্য প্রতি ৯টি স্ত্রী গাছের জন্য ১ টি পুরুষ থাকা আবশ্যক। পুরুষ গাছগুলো পুরো জমিতে সমানভাবে ছড়িয়ে থাকতে হবে। কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যনে পটলের ফলন অনেক বাড়ানো সম্ভব।

কৃত্রিম পরাগায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন

বাউনি বা মাচা দেয়া: পটল একটি লতানো উদ্ভিদ। তাই পটল গাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি এবং ভাল ফলনের জন্য বাউনি বা মাচা দেয়া অবশ্যই দরকার। বাঁশের কাঠির সাহায্যে চারা গাছকে মাচায় তুলে দেয়া হয়। এক মিটার উচ্চতায় মাচা বা বাউনি দিলে পটলের ফলন প্রায় দ্বিগুণ পাওয়া যায়। পটলের মাচা বা বাউনি দুই ভাবে দেয়া যায়। বাঁশের তৈরি আনুভূমিক এবং রশি দ্বারা তৈরি খাড়া বা উল্লম্ব। মাচার দৈর্ঘ ও প্রস্থ হবে বেডের সমান। পটলের আকর্ষি ছোট হওয়ায় বাউনি যত চিকন আকারের দেয়া যায় ততই ভাল। পটলের মাচা বা বাউনি বেশ খরচ সাপেক্ষ। তাই অনেক এলাকায় পটল চাষীরা বাউনির বদলে মাটির উপর খর-কুটা বা কচুরিপানা দিয়ে তার উপর গাছ তুলে দিয়ে থাকেন। এতেও ভাল ফলন পাওয়া যায় এবং উৎপাদন খরচও কম হয়। তবে পটলের মাটির সংস্পর্শে থাকা অংশ ফ্যাকাশে হলুদ হয়ে যায় এবং বাজারমূল্য কিছুটা কমে যায়। যেসব এলাকায় বৃষ্টিপাত কম হয় সেসব এলাকায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। তবে রপ্তানীযোগ্য উচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন পটল পেতে হলে অবশ্যই বাউনি বা মাচা দিতে হবে।  অঙ্গ ছাটাই: পটল গাছ মাচার উঠার আগ পর্যন্ত পাশ দিয়ে বেড়ে ওঠা ডালপালা ছাটাই করে দিতে হয়। পরবর্তীতে প্রতিবার ফসল সংগ্রহের পর মরা এবং রোগ ও পোকা আক্রান্ত পাতা ও শাখা ছাটাই করে দিতে হয়। এতে ফলধারী নতুন শাখার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং ফলন বেশি হন।

তথ্যের উৎস :

কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস), ১৮/০২/২০১৮