ধান এর বীজ ও বীজতলার তথ্য

ফসল : ধান

বর্ণনা : ধানের ক্ষেত্রে সাধারনত ভিজা/কাঁদা, শুকনা ও ভাসমান বীজতলা ব্যবহার করা হয়। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার কারনে বীজতলা করার মত উঁচু জমি পাওয়া না গেলে অথবা পানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া না গেলে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে।

বীজ ও বীজতলার প্রকারভেদ :

১।ভিজা

২।শুকনা

৩।ভাসমান


ভাল বীজ নির্বাচন :

ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির মূল উপকরণই হচ্ছে উন্নতমানের বীজ। ভালো বীজ বিজাতমুক্ত, আগাছা বীজমুক্ত, রোগ ও পোকামাকড়মুক্ত, অপদ্রব্যমুক্ত, পরিপক্ব ও পুষ্ট, সমআকার, চকচকে, সঠিক আর্দ্রতাযুক্ত (১২%), অংকুরোদগম ক্ষমতা বা গজানোর হার কমপক্ষে ৮০% এবং বিশুদ্ধতা হার কমপক্ষে ৯৫-৯৯%। বর্তমানে বাজার থেকে প্যাকেট বীজ কেনা যায়। তবে বীজের প্যাকেটে লাগানো ট্যাগ ও লেবেলিং এ উল্লিখিত বীজ গজানোর হার ও বিশুদ্ধতার হার দেখে কিনতে হবে।
বপনের জন্য রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট বীজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ভাল বীজ মানে সবল চারা। আর রোগাক্রান্ত চিটা থেকে বীজতলায় সহজেই রোগ ছড়ায়। তাই মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারের লক্ষ্যে ভালভাবে বীজ বাছাইয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। বীজ বাছাইয়ের জন্য প্রায় ৪০ লিটার পরিষ্কার পানিতে দেড় কেজি ইউরিয়া সার মিশিয়ে দিন। এবার ৪০ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দিন। ভারী, পুষ্ট, সুস্থ ও সবল বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপরিপুষ্ট, হালকা, রোগ বা ভাঙ্গা বীজ ভেসে উঠবে। হাত অথবা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো পৃথক করে নিন। ভারী বীজ নিচ থেকে তুলে নিয়ে পরিস্কার পানিতে ৩-৪ বার ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। 
বীজ তলাঃ
বীজতলা তৈরির আগে জেনে নিতে হবে কখন কোন জাতের ধানের বীজ বীজতলায় বপন করতে হবে।

বীজতলা প্রস্তুতকরণ : ১। ভিজা বীজতলাঃ বীজতলার জন্য দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি, খরকুটা ও আবর্জনা মুক্ত জমি নির্বাচন করে২-৩ ইঞ্চি পানি দিয়ে ২/৩ টি চাষ ও মই দিয়ে ৭-১০ দিন পানি ভালভাবে পানি আটকিয়ে রাখতে হবে। আগাছা খড় ইত্যাদি পচে গেলে আবার চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাঁদাময় করে জমি তৈরি করতে হবে। এরপর ১ মিটার চওড়া ও ৩ মিটার লম্বা অথবা প্রয়োজনমত বেড তৈরি করতে হবে এবং নালার জন্য ২৫-৩০সেমিঃ বা ১০-১২ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। নির্ধারিত জমির দুই পাশের মাটি দিয়ে বেড তৈরি করে বেডের উপরের মাটি বাঁশ বা কাঠের চ্যাপ্টা লাঠি দিয়ে সমান করতে হবে। বেড তৈরির ৩/৪ ঘন্টাপর বীজ বুনতে হবে। ২। শুকনা বীজতলাঃ প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা সম্পন্ন দোঁআশ-বেলে দোআঁশ মাটিতে শুকনা বীজতলা করতে হবে। ১ মিটার চওড়া ও প্রয়োজন মত দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট জমি নিয়ে বীজতলা তৈরির সময় ৫-১০ কেজি পচা গোবর সার ব্যবহার করে আড়াআড়ি ভাবে চাষ মই দিয়ে বীজতলা ভালভাবে তৈরি করে নিতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে ৫০-৬০ গ্রাম অংকুরিত বীজ (যা পুর্বে সাধারণভাবে ধানের বীজজাগ অংকুরিত করা হয়) এই হারে প্রতি শতকে ৩ কেজি ভিত্তি বীজের প্রয়োজন হবে। অংকুরিত বীজ বীজতলায় ছিটানোর প মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং কাল পলিথিন ব্যাতিত অন্য যে কোন রঙের পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। নিয়মিত ও পরিমিত পর্যবেক্ষন করতে হবে। বীজতলা ২০-২৫ দিন ঢেকে রাখলে চারা গুলো রোপন উপযোগী হবে। ৩। ভাসমানবীজতলাঃ ভাসমান বীজতলা তৈরির জন্য প্রথমে বন্যার পানি, পুকুর, ডোবা বা খালের উপর বাশেঁর চাটাইয়ের মাচা বা কলা গাছের ভেলা তৈরি করতে হবে। তার উপর১-২ ইঞ্চি পুরু কাদার স্তর দিয়ে কাঁদায় বীজতলা তৈরি করতে হবে। এরপর স্বাভাবিক নিয়মে বীজ জাগ দিয়ে অংকুর বের করে ঐ অংকুরিত বীজ বীজতলায় ফেলতে হবে। বীজতলা যাতে ভেসে না যায় সেজন্য খুটির সাথে বেধে রাখতে হবে।


বীজতলা পরিচর্চা : ভিজা বীজতলাঃ বীজতলায় সবসময় নালা ভর্তি পানি রাখা উচিত। বীজগজানোর ৪-৫ দিন পর বেডের উপর ২-৩ সেমিঃ পামি রাখলে আগাছা ও পাখির উপদ্রব কম হয়। বোরো মৌসুমে শীতের জন্য চারার বাড় বাড়তি কম হয়। এ কারণে রাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে ঠান্ডা জনিত ক্ষতি থেকে চারা রক্ষা পায় এবং চারার বাড় বাড়তি ভাল হয়। চারা গাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার উপরি প্রয়োগের পর বীজতলায় পানি ধরে রাখা উচিত। শৈত্য প্রবাহের সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে দিলে বীজতলার পানি সকালে বের করে আবার নতুন পানি দিলে, প্রতিদিন সকালে চারার উপর জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিলে, চারা ঠান্ডার প্রকোপ হতে রেহাই পায়। শুকনা বীজতলাঃ বীজতলা রসের অভাব হলে স্প্রে করে হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। পলিথিনের নিচের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পলিথিন ২/৩ ঘন্টা সরিয়ে দতে হবে। বীজতলা রোগে আক্রান্ত হলে রোগনাশক স্প্রে করতে হবে। তবে ব্যবহারের পর ২/৩ ঘন্টা পলিথিন তুলে রোদ/ আলো লাগাতে হবে। অতিরিক্ত শীতে কোন ভাবেই পলিথিন সরানো যাবে না। ভাসমানঃ মাঝে মাঝে বীজতলা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ হলে বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে।

তথ্যের উৎস :

আধুনিক ধানের চাষ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), ২০তম সংস্করণ, জুন-২০১৭

ধান উৎপাদন প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য ভাণ্ডার, ১২/০২/২০১৮